ফেলানী হত্যা মামলার শুনানি কার্যতালিকা থেকে বাদ, বিচার অনিশ্চিত

দীর্ঘ দিন পর বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার পুনঃবিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে আনা রিটের শুনানী হওয়ার জন্য বুধবার (১৮ মার্চ ) নির্ধারিত তারিখ থাকলেও হয়নি। শুধু তাই নয় কার্যতালিকা থেকেও বাদ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকউটর এসএম আব্রাহাম লিংকনকে নিশ্চিত করেছেন কলকাতার বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায়। এর ফলে ফেলানী হত্যার সুবিচার পাওয়ার বিষয়টি আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি ড. ডি ওয়াই চন্দ্রচান্দ এবং বিচারপতি কেএম জোসেফের যৌথ বেঞ্চে রিটের শুনানী শুরু হয়েছিল। এদিন কিছু সময় শুনানী চলার পর পরবর্তী তারিখ ১৮ মার্চ ধার্য্য করা হয়েছিল। আর সেদিন রিটের পক্ষে শুনানীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন অ্যাডভোকেট বিজন ঘোষ ও অপর্ণা ভাট। আর প্রতিপক্ষ ভারত ইউনিয়ন ও অন্যান্যদের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিলেন অ্যাডভোকেট ডি মোহনা।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট করোনার কারণে জরুরি বিষয় ছাড়া অন্যকিছু শুনানি না করায় ফেলানীর রিটটির শুনানী হয়নি এবং কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আবার স্বাভাবিক অবস্থা এলো রিটটি শুনানীর জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছিল বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলেছিল ৫ ঘণ্টা। ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পর বিএসএফ লাশ ফেরত দিলে নাগেশ্বরী উপজেলার কলোনীটারী গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছিল।

ওই দিন ভারতের ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনস্ত চৌধুরীহাট বিওপির কোম্পানী কমান্ডারের এফআইআর-এর ভিত্তিতে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করা হয় ( জিডি নং-৩৪৯)। পরে এরই ভিত্তিতে ওই দিন একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয় ( মামলা নম্বর-৫/১১)।

এদিকে এই নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কুচবিহারে ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টের বিচার এবং পূণর্বিচারে ফেলানী হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে খালাস দেয়া হয়।

এরই প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট ফেলানী হত্যা মামলার পুনঃবিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে মাসুম সম্পাদক কিরিটি রায় এবং ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম যৌথভাবে রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনের হলফনামায়। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন স্বাক্ষর করেছিলেন।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাদি হয়ে আর একটি রিট আবেদন ভারতের সুপ্রীম কোর্ট দাখিল করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, আমি হার মানবো না। যতদিন মেয়ে ফেলানী হত্যার ন্যায্য বিচার পাবো না ততদিন বিচার চাইতে থাকবো।

 

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন